Pages

Monday, June 11, 2012

দেশ পুড়বে শুকনো তামাক পাতার মতো


সমস্ত বাংলাদেশ যখন বিপিএল জ্বরে আক্রান্ত,বলা ভালো গেইল ঝড়ে। দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়াল জামাত-শিবির। শুরু হয়েছিল গতকাল থেকেই। চট্রগ্রামের হাটহাজারীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শুরু । আজ আরও কয়েকটি মন্দিরে হামলা চালিয়েছে জামাত শিবির। নন্দিরহাটে লোকনাথ বাবার মন্দির ভাংচুর হোল আজ। বাবা লোকনাথের আশ্রম জ্বালিয়ে দিয়েছে। হামলা চালাচ্ছে হিন্দু বাড়িতে। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়ি ঘর। নারীদের উপর নির্যাতন হচ্ছে। পুরুষদের উপর আক্রমণ চলছে। জনমনে আতঙ্ক,গাড়ি চলাচল বন্ধ।

এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়বে, সাধারন মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পুজি করে জামাত-শিবির কতদূর যেতে পারে সেটা দেখার বিষয়। তথাকথিত খুনের বদলা নিতে জামাত- শিবির এই দাঙ্গা চালাবে,আর সাধারন মানুষকে বোঝাবে ইসলামি আন্দোলন এবং ইসলামি শাসন কায়েম,মূর্তি পুজা উচ্ছেদিকরন।

যতদূর মনে পরে সমগ্র বাংলাদেশে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ২টি আসনে জামাত সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছিল,২০০৮ সালে। সেই সমর্থন থেকেই সম্ভবত চট্টগ্রামকে লক্ষ্য করা,সেই সাথে খুনের! বদলা।

হাজারো সমস্যা জর্জরিত আমাদের এই ছোট্ট দেশ। এখানে এখন যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়,একটা শুকনো তামাক পাতার মত এই ছোট দেশটি নিমিষেই পুরে ছারখার হয়ে যাবে।

এরপর শুক্রবার সকাল থেকে হাটহাজারীতে সড়ক অবরোধ করে স্থানীয় মুসল্লিরা। হাটহাজারী থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার আগে (চট্টগ্রামের দিকে) দুপুরে সড়কের ওপর জুমার নামাজও পড়া হয়।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, জামায়াতে ইসলামী এই ঘটনায় ইন্ধন দিচ্ছে।

এই বিষয়ে হিন্দু স¤প্রদায়ের কেউই মুখ খুলছে না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি শুক্রবার নন্দীরহাট ঘুরে তিনটি মন্দিরে ভাংচুরের চিহ্ন দেখেছেন। এগুলো হলো- শ্রী শ্রী মগদেশ্বরী মায়ের মন্দির, জগন্নাথ বিগ্রহ মন্দির ও লোকনাথ মন্দির। এর মধ্যে মগদেশ্বরী মন্দিরে আগুনও দেওয়া হয়।

এছাড়া হাটহাজারী উপজেলা সদরে কালীবাড়ি মন্দিরেও ভাংচুরের চিহ্ন দেখা গেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমীন হাটহাজারীতে রয়েছেন, স্থানীয়দের শান্ত করার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি দুপুরে পর নন্দীরহাট যান। সেখান থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে হেঁটে হাটহাজারী উপজেলা সদরে যান তিনি।

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাটহাজারীতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

১৪৪ ধারা জারির ফলে কোথায় বেশি মানুষ জড়ো হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

মন্দির ভাংচুরের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে অস্থির করতে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর জামায়াত-শিবির পরিস্থিতি অস্থির করতে ইন্ধন যোগাচ্ছে।”

হাটহাজারীর নন্দীরহাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে দুই ছাত্র নিহত হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবারের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি বলে মনে করেন সালাম।

হাটহাজারী থানা বিএনপির সভাপতি এস এম ফজলুল হক পরিস্থিতির অবনতির জন্য প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশাসন শুরু থেকে তৎপরত থাকলে পরিস্থিতি এত দূর গড়াত না।”

এলাকায় স¤প্রীতি রক্ষায় বিএনপির সব নেতা-কর্মীদের কাজ করতে বলা হয়েছে জানিয়ে ফজলুল বলেন, এখন সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে হাজার খানেক লোক হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। এতে নন্দীর হাট থেকে হাটহাজারী সদর পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

অবরোধকারীদের দাবি, বৃহস্পতিবার লোকনাথ সেবা আশ্রমের মিছিল থেকে মসজিদে ঢিল ছোড়া হয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

সকালে পরিস্থিতি শান্ত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নন্দীর হাট গিয়েছিলেন। কিন্তু বিফল হয়ে ফেরেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নন্দীর হাট এলাকায় লোকনাথ সেবাশ্রমের মন্দিরে হামলা হয়।

ওই মন্দির প্রাঙ্গণে শুক্রবার সকাল থেকে বার্ষিক মহোৎসব হওয়ার কথা ছিল। ভাংচুরের কারণে ওই উৎসব আর হচ্ছে না। মন্দির প্রাঙ্গণে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এই ঘটনার শুরু বৃহস্পতিবার সকালে। স্থানীয়রা জানায়, লোকনাথ সেবাশ্রমের মহোৎসবের একটি শোভাযাত্রা স্থানীয় একটি মসজিদ অতিক্রমের সময় দুই পক্ষের কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর মন্দিরে হামলা হয়।

এই অংশটুকু বিডি নিউজ থেকে তুলে দিলাম। ১৪৪ ধারা ও দাঙ্গা সম্পর্কে একমাত্র এখানেই শেষ আপডেট পাওয়া গেল।
এবারে একটু ব্যাবচ্ছেদ করা প্রয়োজন, বলা হয়েছে সাধারন মুসুল্লি মানুষ আটক করছে, অবরোধ করেছে, যদি তাই হয়, তাহলে সারা বাংলাদেশের মুসুল্লিরা ঘুমাচ্ছে কেন? শুধু চট্টগ্রামের মুসুল্লিরা কেন খেপল?

এবারে সোজা চোখে দেখা যাক, শিবির কর্মীর খুনের জোর ধরে তারা এই তাণ্ডব চালাচ্ছে। যৌক্তিকভাবে চিন্তা করে দেখলে কিছু কারন খুজে পাওয়া যাবে এই দাঙ্গার পেছনে
১) শিবির কর্মীর খুনের বদলা/ রক্তের বদলে রক্ত
২) বর্তমান সরকার এবং শাসনতন্ত্র কে নাড়িয়ে দেয়া।
৩) যুদ্ধাপরাধী বিচার থেকে সাধারন জনগন ও সরকারের দৃষ্টিচ্যুতি
৪) পরাশক্তি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।
খুব সাধারন ভাবে এগুলো আমাদের চোখে পরে। কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো আমাদের চোখে পরে না,যেমন এই সব দাঙ্গার মাধ্যমে দলীয় সংগঠনকে শক্তিশালী করা,ইস্যু তৈরি করে বিভিন্ন ইসলামি গ্রুপ থেকে চাদা সংগ্রহ। এবং ইসলামি রাষ্ট্র গুলোর কাছ থেকে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের সমর্থন আদায় করা।
কিন্তু কথা হোল সাধারন মানুষ যদি এই দাঙ্গায় অংশগ্রহন করে থাকে,কেন করল? কি এমন বলা হচ্ছে,হয়েছিল যার কারনে সাধারন মানুষ দাঙ্গায় অংশ নিয়েছে। জাতি হিসেবে আমরা আসলে খুব আবেগ প্রবন,খুব অল্পতে আমাদের আমার মেকি আবেগ,অনর্থক আবেগ চাড়া দিয়ে ওঠে। এই যেমন, সারা সপ্তাহ নামাজ না পরে জুমার দিন মসজিদে হুমড়ি খেয়ে পরা, মসজিদের উন্নয়ন,মুসলিম ভাইদের উপরে অত্যাচার এই সব লেকচার শুনে মাথা দোলাই। আবার নামাজ থেকে বের হয়ে সব ভুলে যাই। শবে কদরের নামাজ না পড়লেও আমাদের হালুয়া,সন্দেশ রুটি খাওয়া চাই।
মূল কথা হোল মৌলিক কিম্বা মুখ্য বিষয়গুলো ছেড়ে আমরা গৌণ বিষয় নিয়ে খুব মাথা ঘামাই।

দাঙ্গায় যদি সাধারন মানুষ এসে থাকে তবে সেখানে জামাত-শিবিরের কিছু প্রোপাগান্ডা অবশ্যই ছিল। এবং আমি প্রায় নিশ্চিত সেই প্রোপাগান্ডাগুলো হল এমন-
১) সরকার ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে।
২) ভারত হিন্দুদের দেশ,হিন্দুরা ভারতের সাপোর্টে আমদের দেশে বেবসা-বাণিজ্য করছে,এবং লাভের টাকা দিয়ে ভারতে বাড়ি-জমি কিনছে।
৩) ভারতীয় পণ্য উচ্ছেদ করতে হলে হিন্দুদের সবার প্রথম উচ্ছেদ করতে হবে।
৪) মূর্তি পুজা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরা মূর্তি পুজা করে, পবিত্র ভুমি চট্টগ্রামকে দূষিত করছে।
এছাড়াও সীমান্তে বিসিএফ এর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আমাদের ভারত বিদ্বেষ তুঙ্গে তুলেছে। জামাত এই ইসুকে বুকে তুলে নিয়েছে, বহু হোক্স ছবি বিসিএফ এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, মিথ্যাচার,ভুল তথ্য দিয়ে এইসব ছবি, আপডেট সাজানো হয়েছিল। সেই সাথে আমাদের কালচারের উপর ভারতীয় কালচারের প্রভাব এবং স্যাটেলাইট জগতে ভারতীয় চ্যানেলের ছড়াছড়ি।

সব বুঝলাম,তবে তার মানে এই না যে ভারত বর্জন ইস্যুতে আমাদের হিন্দু বর্জন করতে হবে। যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করেছেন,তারাও বাংলাদেশের নাগরিক। তাদেরও মাতৃভূমি বাংলাদেশ। হিন্দু ধর্মের কিছু পবিত্রস্থান রয়েছে ভারতে,এই যেমন গঙ্গা-কাশি। উদাহারন আছে আরও অনেক। উপাসনা-ইবাদত নিয়ে তর্ক চলেনা। সেই তর্ক উঠলে প্রথমেই বলতে হবে মুসলমানরা কেন মক্কা-মদিনা যাবে?
এই হিন্দুরা আমাদের দেশে যুগে যুগে নির্যাতিত হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছে, জ্বালানো হয়েছে। দিন বদল হয়নি,হাত বদল হয়েছে। ৭১ এ পুড়েছে সাইদি,নিযামি,আজমের হাতে। ধর্ষিত হয়েছে এদের শিস্নতলে। আর এখন এদের চামচাদের কাছে।

0 comments:

Post a Comment